আইএসএসবি (issb) সম্পর্কে বিস্তারিত।

আইএসএসবি পরীক্ষায় যা দেখা হয়:


লেখা: মোঃ জিহাদুর রহমান(ক্যান্টনমেন্ট কলেজ,যশোর)


সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীতে অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেতে পার হতে হয় বেশ কয়েকটি ধাপ। প্রাথমিক বাছাই ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ডাকা হয় ইন্টার সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড (আইএসএসবি) পরীক্ষায়। আইএসএসবি পরীক্ষা নেওয়া হয় চার দিন ধরে। এখানে প্রার্থীর মনস্তাত্ত্বিক, বুদ্ধিমত্তা, শারীরিক দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব, বিচারবোধ, উপস্থিত বুদ্ধি, পরিকল্পনা ক্ষমতা, নেতৃত্বের দক্ষতা ইত্যাদি দেখা হয়। আন্তবাহিনী নির্বাচন পর্ষদের এই পরীক্ষায় সাধারণত প্রার্থী যাচাই করা হয় ত্রিমাত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিতে। ত্রিমাত্রিক পদ্ধতিতে থাকে পরিবেশগত, শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক।



প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রতি পর্বে গঠন করা হয় ২২ থেকে ২৪টি আলাদা বোর্ড। এই বোর্ডের নির্বাচক হিসেবে থাকেন অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত সামরিক কর্মকর্তারা। প্রার্থী যাচাই-বাছাই করেন মনোবিজ্ঞানী, দল অভীক্ষা কর্মকর্তা (গ্রুপ টেস্টিং অফিসার) ও বোর্ডের ডেপুটি প্রেসিডেন্টরা।



প্রথম দিন

আইএসএসবিতে প্রথম দিন সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে নিশ্চিত করতে হয় উপস্থিতি। এরপর তাদের একটি স্বাগত অনুষ্ঠানে চার দিনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে দেওয়া হয় ধারণা। প্রথমেই বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা। এ পরীক্ষার দুটি অংশ থাকে—ভাষাগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। প্রশ্ন করা হয় এমসিকিউ টাইপের।


ভাষাগত পরীক্ষায় সাধারণত ১০০টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরীক্ষায় ৩৮টি প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়। বাচিক পরীক্ষায় সত্য-মিথ্যা, বিভিন্ন সিরিজ, অসাদৃশ্য, গাণিতিক প্রশ্ন করা হয়। আর অবাচিক পরীক্ষায় নানা ছবি বা চিহ্ন ও বিভিন্ন জ্যামিতিক চিত্র দিয়ে প্রশ্ন হয়ে থাকে। যারা পাস নম্বর পাবে না তাদের এখান থেকেই বিদায় নিতে হবে।


বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার পর প্রার্থীকে অংশ নিতে হয় পিকচার পারসেপশন অ্যান্ড ডেসক্রিপশন টেস্টে (পিপিডিটি)। এ পরীক্ষায় আংশিক অস্পষ্ট চিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়। সেই ছবি দেখে প্রার্থীদের কল্পনামতো ইংরেজিতে গল্প লিখতে বলা হয় এবং নির্বাচকমণ্ডলীর উপস্থিতিতে এর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়।


এ দুই পরীক্ষার যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের বিদায় নিতে হয়। তবে প্রথম দিন সকালের পর আর কাউকে বাদ দেওয়া হয় না। বাকিরা পরবর্তী তিন দিনের জন্য নির্বাচিত হয়।


উত্তীর্ণ প্রার্থীরা বিকেলে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক দিক, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা ও ব্যক্তিত্ব যাচাই করা হয় এ পরীক্ষায়। থাকে বাংলা ও ইংরেজি বাক্য রচনা, বাক্য সম্পূর্ণকরণ, ছবি দেখে গল্প লিখন, অসম্পূর্ণ গল্প সম্পূর্ণকরণ, আত্মসমালোচনা, সমকালীন বিষয়ে প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন বিষয়। এর মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের পরীক্ষা।



দ্বিতীয় দিন

এই  দিন কোনো লিখিত পরীক্ষা নেই। প্রার্থীকে অংশ নিতে হয় নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজিতে দলগত আলোচনা, বক্তৃতা, শারীরিক সামর্থ্যের পরীক্ষায়। দলগত পরীক্ষার জন্য সাত-আটজনকে নিয়ে গঠন করা হয় আলাদা দল। নির্বাচক থাকবেন দল-নিরীক্ষা কর্মকর্তা (জিটিও)। এ পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা হয় দলগত কাজের ক্ষমতা ও শারীরিক দক্ষতা। দলগত আলোচনা পর্বে বাংলা ও ইংরেজিতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করতে হয়।


এরপর প্রগ্রেসিভ গ্রুপ টাস্ক (পিজিটি) পর্বে একটি দলকে চারটি বাধা পর্যায়ক্রমে পার হয়ে এগিয়ে যেতে হয়। অর্ধ দলগত কাজ (এইচজিটি) গঠিত হয় তিন-চারজন প্রার্থীকে নিয়ে। এখানে একটি বাধা অতিক্রম করতে হয়। এরপর প্রার্থীদের ইংরেজিতে উপস্থিত বক্তৃতায় অংশ নিতে হয়।


দ্বিতীয় দিন সকালের সর্বশেষ পরীক্ষা হচ্ছে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা। এতে একজন প্রার্থীকে আটটি শারীরিক পরীক্ষা দিতে হয়। এগুলো হলো দীর্ঘ লম্ফ, জিগজাগ, ওয়াল জাম্প, উচ্চ লম্ফ, বার্মা সেতু, টারজান সুইং, রশি আরোহণ ও ঝুলন্ত কাঠের গুঁড়ি।


বিকেলে প্রার্থীদের একে একে ডাকা হয় সাক্ষাত্কারের জন্য। প্রার্থীর সাহস, আত্মবিশ্বাস, তাত্ক্ষণিক বুদ্ধি ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয় এতে।


প্রার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পারিবারিক তথ্য, শখ, ঐকান্তিক ইচ্ছা, নিজ জেলা ও তার ঐতিহ্য, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা, ইংরেজিতে দক্ষতা, শিক্ষাগত তথ্য জানতে চাওয়া হতে পারে সাক্ষাত্কারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার বিশ্লেষণও করতে বলা হতে পারে। সাক্ষাত্কারের দায়িত্বে থাকেন একজন ডেপুটি প্রেসিডেন্ট। প্রার্থীর সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে এ সাক্ষাত্কারের ফলাফলের ওপর।



তৃতীয় দিন

তৃতীয় দিন অংশ নিতে হয় প্ল্যানিং ও কমান্ড টেস্টে। এ দুটি পরীক্ষায় যাচাই করা হয় প্রার্থীর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার দক্ষতা। সকালের পরীক্ষাগুলো হচ্ছে প্ল্যানিং এক্সারসাইজ। এখানে একটি গল্পের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা দেওয়া থাকে। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হয়। এরপর কমান্ড টাস্ক। এতে প্রত্যেক সদস্যকে তিন-চারজনের একটি গ্রুপের দলনেতা বানানো হয়। তাকে দলের সদস্যদের নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে অতিক্রম করতে হয় একটি বাধা। এরপর পারস্পরিক সমঝোতা মূল্যায়নে মিউচ্যুয়াল অ্যাসেসমেন্ট। প্রার্থীদের বিচারিক ক্ষমতা যাচাই করা হয় এতে। নিজেকেসহ দলের সবাইকে দক্ষতার ভিত্তিতে নম্বর দিতে হয় দলনেতাকে। দ্বিতীয় দিন যাদের সাক্ষাত্কার হয়নি তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় তৃতীয় দিন বিকেলে।



চতুর্থ দিন

শেষ দিন কোনো পরীক্ষা থাকে না। এদিন ফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচকরা মিলে প্রত্যেক প্রার্থীর তিন দিনের কার্যক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে নির্বাচিত ও প্রত্যাখ্যাতদের তালিকা করেন। সাধারণত দুপুর ১২টার পর নিজ নিজ গ্রুপের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ফল ঘোষণা করেন। যারা উত্তীর্ণ হয় তাদের গ্রিনকার্ড দেওয়া হয়। আর যারা উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের দেওয়া হয় রেড কার্ড। আইএসএসবিতে উত্তীর্ণ প্রার্থী চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সফল হলেই পায় চূড়ান্ত নিয়োগ।


আর একটি বিষয়, চার দিনের এই পরীক্ষার জন্য আপনাকে প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদপত্র, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, পোশাক, জুতা, লেখার সরঞ্জাম (কলম, ২বি পেনসিল)। 


আইএসএসবি প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে

 www.issb-bd.org ওয়েবসাইটে।


মন্তব্যসমূহ